ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের কারণ ও সমাধান
Meta: ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মূল কারণ, ইতিহাস, প্রভাব এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা। এই সংঘাতের পেছনের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট।
ভূমিকা
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত একটি দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল সমস্যা। এই সংঘাতের মূলে রয়েছে ভূমি, ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের মতো বিষয়গুলো। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত শুধু একটি আঞ্চলিক সমস্যা নয়, এটি বিশ্বজুড়ে মুসলিম ও ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গভীর বিভেদ তৈরি করেছে। এই সংঘাতের কারণে অগণিত মানুষ তাদের জীবন ও সম্পত্তি হারিয়েছে, এবং এর প্রভাব আজও বিদ্যমান। এই নিবন্ধে, আমরা এই সংঘাতের পেছনের কারণগুলো, এর ইতিহাস, প্রভাব এবং কিছু সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করব।
ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের মধ্যেকার এই সংঘাতের শুরুটা বেশ পুরনো। মূলত, এটি দুটি জাতির মধ্যে নিজেদের ভূমির অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। উভয় পক্ষই জেরুজালেমকে নিজেদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে, যা এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলেছে। এই সংঘাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী অস্থিরতা বিরাজ করছে, যা বিশ্ব রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলছে।
এই সংঘাতের একটি বড় কারণ হলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন পক্ষকে সমর্থন করায় এই সমস্যার সমাধান আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে, একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে এবং একে অপরের দাবি ও অধিকারকে সম্মান করতে হবে। তা না হলে, এই সংঘাত চলতেই থাকবে এবং আরও অনেক মূল্যবান জীবন নষ্ট হবে।
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বেশ দীর্ঘ এবং জটিল। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সূচনা বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে, যখন ইহুদিরা ইউরোপ থেকে ফিলিস্তিনে আসা শুরু করে। এই অঞ্চলে অটোমান সাম্রাজ্যের দুর্বল হয়ে যাওয়া এবং পরবর্তীতে ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে আসার ফলে ইহুদি অভিবাসন আরও বৃদ্ধি পায়। ফিলিস্তিনি আরবদের মধ্যে এই অভিবাসন নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়, যা ধীরে ধীরে সংঘাতে রূপ নেয়।
১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণা এই সংঘাতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এই ঘোষণায় ব্রিটিশ সরকার ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর ফলে ইহুদিদের অভিবাসন আরও বেড়ে যায় এবং ফিলিস্তিনি আরবদের মধ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়, যখন হলোকাস্ট থেকে বেঁচে যাওয়া অনেক ইহুদি ফিলিস্তিনে আশ্রয় নেয়।
১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে দুটি অংশে ভাগ করার প্রস্তাব দেয় – একটি ইহুদি রাষ্ট্র এবং অন্যটি আরব রাষ্ট্র। ইহুদিরা এই প্রস্তাব মেনে নিলেও, আরবরা তা প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলস্বরূপ ১৯৪৮ সালে প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে ইসরায়েল জয়লাভ করে এবং ফিলিস্তিনের বেশিরভাগ অংশ দখল করে নেয়। প্রায় ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়, যা নাকবা নামে পরিচিত। এই ঘটনা ফিলিস্তিনিদের মনে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করে এবং সংঘাতের বীজ আরও গভীরে প্রোথিত হয়।
সংঘাতের পরবর্তী পর্যায়
১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধ এই সংঘাতের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ইসরায়েল এই যুদ্ধে মিশর, সিরিয়া ও জর্ডানের কাছ থেকে গাজা, পশ্চিম তীর, সিনাই উপদ্বীপ ও গোলান মালভূমি দখল করে নেয়। এর ফলে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে প্রতিরোধ আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়। ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করে।
১৯৭৩ সালের ইয়োম কিপ্পুর যুদ্ধ এবং ১৯৮০-এর দশকে লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান এই সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ১৯৮৭ সালে প্রথম ইন্তিফাদা শুরু হয়, যা ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলি দখলের বিরুদ্ধে একটি স্বতঃস্ফূর্ত গণ-অভ্যুত্থান ছিল। ১৯৯০-এর দশকে অসলো চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর সংঘাত কিছুটা স্তিমিত হলেও, স্থায়ী শান্তি আজও অধরা রয়ে গেছে।
সংঘাতের মূল কারণসমূহ
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের পেছনে বেশ কিছু জটিল কারণ রয়েছে। এই কারণগুলো ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটের সাথে জড়িত। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মূল কারণগুলো আলোচনা করা হলো:
- ভূমির অধিকার: এই সংঘাতের প্রধান কারণ হলো ভূমির অধিকার নিয়ে বিরোধ। উভয় পক্ষই ফিলিস্তিনকে নিজেদের ভূমি হিসেবে দাবি করে। ইহুদিরা মনে করে যে, এটি তাদের ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় অধিকার, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা মনে করে যে, তারা এখানে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসছে এবং এটি তাদের মাতৃভূমি।
- জেরুজালেম: জেরুজালেম উভয় পক্ষের কাছেই পবিত্র স্থান। এখানে মুসলিম, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান রয়েছে। ইসরায়েল পুরো জেরুজালেমকে তাদের রাজধানী হিসেবে দাবি করে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনিরা পূর্ব জেরুজালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের রাজধানী করতে চায়। এই নিয়ে বিরোধ সংঘাতের একটি বড় কারণ।
- উদ্বাস্তু সমস্যা: ১৯৪৮ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর প্রায় ৭ লক্ষ ফিলিস্তিনি তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়। তারা এবং তাদের বংশধররা আজও নিজ দেশে ফেরার অধিকারের জন্য লড়াই করছে। এই উদ্বাস্তু সমস্যা সংঘাতের একটি অন্যতম জটিল দিক।
- বসতি স্থাপন: ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপন করে চলেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এই বসতি স্থাপন ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল এবং তাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রের সম্ভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এটি সংঘাতের অন্যতম প্রধান কারণ।
- রাজনৈতিক কারণ: ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ এবং দুর্বল নেতৃত্ব সংঘাতের একটি কারণ। হামাস এবং ফাতাহর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধা দেয়। অন্যদিকে, ইসরায়েলের কঠোর নীতি এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ সংঘাতকে জিইয়ে রেখেছে।
ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণ
ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ভিন্নতাও এই সংঘাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। ইহুদি ও মুসলিমদের মধ্যে ঐতিহাসিক বিদ্বেষ এবং অবিশ্বাস এই সংঘাতকে আরও বাড়িয়ে তোলে। উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর, যা প্রায়শই সংঘাতের রূপ নেয়।
সংঘাতের প্রভাব
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এই সংঘাত শুধু ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর প্রভাব পুরো মধ্যপ্রাচ্য এবং বিশ্ব রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে অসংখ্য মানুষের জীবনহানি হয়েছে, অনেকে ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
- মানবিক সংকট: এই সংঘাতের কারণে ফিলিস্তিনিদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের অবরোধের শিকার, যেখানে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাব দেখা দিয়েছে। পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিরা নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদের জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলেছে।
- অর্থনৈতিক ক্ষতি: সংঘাতের কারণে ফিলিস্তিনের অর্থনীতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইসরায়েলের অবরোধ এবং ঘন ঘন সামরিক অভিযানের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে, বেকারত্ব বাড়ছে এবং দারিদ্র্য চরম আকার ধারণ করেছে। ইসরায়েলের অর্থনীতিও সংঘাতের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যদিও এর মাত্রা ফিলিস্তিনের তুলনায় কম।
- রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: এই সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। বিভিন্ন আরব দেশ ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করে, যা ইসরায়েলের সাথে তাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে। সংঘাতের কারণে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, যা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তা জন্য হুমকি স্বরূপ।
- আন্তর্জাতিক সম্পর্ক: ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন দেশ এই সংঘাতের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নেয়, যা তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে। জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই সংঘাত নিরসনে ব্যর্থ হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রমাণ করে।
মানসিক ও সামাজিক প্রভাব
সংঘাতের কারণে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় সমাজের মানুষ মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিনের সংঘাত শিশুদের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয় এবং তারা সহিংসতা ও বিদ্বেষের শিকার হয়। উভয় সমাজের মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস ও ভয় সৃষ্টি হয়েছে, যা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমাধানের পথে অন্তরায়
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধান অত্যন্ত কঠিন, কারণ এখানে বহু ধরনের জটিলতা রয়েছে। উভয় পক্ষের মধ্যে অবিশ্বাস, রাজনৈতিক বিভেদ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐকমত্যের অভাব সমাধানের পথে প্রধান অন্তরায়। ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধান খুঁজতে গিয়ে যেসব বাধা প্রায়ই দেখা যায়, তার মধ্যে কয়েকটি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- উভয় পক্ষের অনড় অবস্থান: ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলি উভয় পক্ষই তাদের দাবিতে অনড়। ইসরায়েল জেরুজালেমকে তাদের অবিभाज्य রাজধানী হিসেবে দেখতে চায় এবং ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তদের প্রত্যাবর্তনের অধিকার দিতে নারাজ। অন্যদিকে, ফিলিস্তিনিরা ১৯৬৭ সালের আগের সীমানা অনুযায়ী একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চায় এবং উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের অধিকারের ওপর জোর দেয়।
- রাজনৈতিক বিভেদ: ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামাস ও ফাতাহর মধ্যে রাজনৈতিক বিভেদ রয়েছে। এই দুই দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরিতে বাধা দেয়। ইসরায়েলেও রাজনৈতিক অস্থিরতা রয়েছে, যেখানে বিভিন্ন সময়ে কট্টরপন্থী সরকার ক্ষমতায় আসে, যারা শান্তি প্রক্রিয়ার বিরোধী।
- আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ: বিভিন্ন দেশ এই সংঘাতের বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নেয়, যা সমাধানের পথে বাধা সৃষ্টি করে। কোনো কোনো দেশ ইসরায়েলকে সমর্থন করে, আবার কোনো কোনো দেশ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। এই কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি করা কঠিন হয়ে পড়ে।
- বসতি স্থাপন: ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপন ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল করে নিচ্ছে, যা শান্তি আলোচনার পথে একটি বড় বাধা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বসতি স্থাপনের নিন্দা জানালেও, ইসরায়েল তা বন্ধ করেনি।
- উগ্রবাদ: উভয় পক্ষের উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো সংঘাত জিইয়ে রাখতে চায়। তারা সহিংসতা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়াকে বানচাল করার চেষ্টা করে। এই উগ্রবাদীরা উভয় সমাজের মানুষের মধ্যে ভয় ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।
সমাধানের পথে কিছু প্রস্তাবনা
এতসব বাধা সত্ত্বেও, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। এর জন্য উভয় পক্ষকে নমনীয় হতে হবে এবং কিছু মৌলিক বিষয়ে সমঝোতা করতে হবে। নিচে কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরা হলো:
- দুই রাষ্ট্র সমাধান: একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা এই সংঘাতের অন্যতম সমাধান হতে পারে। ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে, যার রাজধানী হবে পূর্ব জেরুজালেম।
- জেরুজালেম: জেরুজালেমকে উভয় রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা যেতে পারে। শহরের পশ্চিমাংশ ইসরায়েলের অধীনে এবং পূর্বাংশ ফিলিস্তিনের অধীনে থাকতে পারে। পবিত্র স্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার হাতে দেওয়া যেতে পারে।
- উদ্বাস্তু সমস্যা: উদ্বাস্তুদের প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে একটি বাস্তবসম্মত সমাধান খুঁজতে হবে। তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং সীমিত সংখ্যক উদ্বাস্তুকে ফেরার অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
- বসতি স্থাপন: ইসরায়েলকে অবৈধ বসতি স্থাপন বন্ধ করতে হবে। বসতিগুলো সরিয়ে নেওয়া হলে শান্তি আলোচনার পথ প্রশস্ত হবে।
- আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সংঘাত নিরসনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করে একটি শান্তি চুক্তি সম্পাদনে সাহায্য করতে পারে।
উপসংহার
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত একটি জটিল এবং দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, যার সমাধান সহজ নয়। তবে, উভয় পক্ষের সদিচ্ছা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা এবং কিছু মৌলিক বিষয়ে সমঝোতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে না পারলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে। তাই, উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে এবং একটি ন্যায্য ও স্থায়ী সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১. ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মূল কারণ কী?
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের মূল কারণ হলো ভূমির অধিকার নিয়ে বিরোধ। উভয় পক্ষই ফিলিস্তিনকে নিজেদের ভূমি হিসেবে দাবি করে। এছাড়াও, জেরুজালেম শহরের নিয়ন্ত্রণ, উদ্বাস্তু সমস্যা এবং ইসরায়েলের বসতি স্থাপন এই সংঘাতের অন্যান্য কারণ।
২. বেলফোর ঘোষণা কী এবং এটি কীভাবে সংঘাতকে প্রভাবিত করেছে?
বেলফোর ঘোষণা হলো ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া একটি প্রতিশ্রুতি, যেখানে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। এই ঘোষণার ফলে ইহুদিদের অভিবাসন বাড়ে এবং ফিলিস্তিনি আরবদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, যা পরবর্তীতে সংঘাতের রূপ নেয়।
৩. দুই রাষ্ট্র সমাধান বলতে কী বোঝায়?
দুই রাষ্ট্র সমাধান হলো ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিরসনের একটি প্রস্তাব, যেখানে ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল পাশাপাশি দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বসবাস করবে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ১৯৬৭ সালের সীমানা অনুযায়ী ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠিত হবে এবং পূর্ব জেরুজালেম হবে এর রাজধানী।
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে এই সংঘাত নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে?
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাত নিরসনে মধ্যস্থতা করতে পারে, উভয় পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসতে উৎসাহিত করতে পারে এবং শান্তি চুক্তি সম্পাদনে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও, তারা ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রদান করতে পারে এবং ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনের নিন্দা জানাতে পারে।
৫. এই সংঘাতের ভবিষ্যৎ কী?
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তবে, একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উভয় পক্ষকে নমনীয় হতে হবে এবং একে অপরের অধিকারকে সম্মান করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংঘাত নিরসনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়।